কলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রধান ফল এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল, মূল্যের দিক থেকে সাইট্রাসের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কম দাম এবং উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণে কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ফসল। কলাতে কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রচুর এবং এটি ভিটামিন যুক্ত ফল বিশেষ করে ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। এছাড়াও কলাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম, ফসফরাস, প্রচুর পরিমানে থাকে । কলা হজম করা খুবই সহজ এবং এটি চর্বি ও কোলেস্টেরল মুক্ত। কলা কে গুঁড়ো করেই প্রথম শিশুর খাদ্য তৈরী করা হয়েছিল।
প্রশ্ন – ০১/ টিস্যু কালচার কলার চারা জি-৯ (g-9) কি এর সুবিধা কি ?
উত্তর ঃ- গ্র্যান্ড নাইন কে এক কথায় জি নাইন বলা হয়। এটি ইজরায়েল থেকে আমদানি করা একটি টিসু কালচার কলার জাত। Grand-9, সংক্ষেপে G-9 কলা বলে । কলা চাষে টিস্যু কালচারের চারার কোন বিকল্প নেই।এ কলা পাকলে হলুদ হয়ে যায় । প্রতি কাদিতে ২৫০-৩০০ টি কলা হয়। কলার চারা লাগানোর ৭-৮ মাসে ফলন পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – ০২/ জি-৯ (g-9) কলা চাষ কখন ও কোন মাটিতে করা যায় ?
উত্তর ঃ – কলা চাষ মূলত সারা বছর করা গেলেও এই কলা চাষে প্রচুর পানি লাগে তাই বর্ষায় জুন ,জুলাই ,আগস্ট মাসে এই কলা চাষ শুরু করলে ভালো। পানি জমে না এমন উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। যে মাটি খুব বেশি অম্লীয় বা ক্ষারীয়ও নয়, উচ্চ নাইট্রোজেন উপাদান,পর্যাপ্ত ফসফরাস স্তর এবং প্রচুর পটাশযুক্ত জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ মাটি কলার চাষের জন্য ভাল।
প্রশ্ন – ০৩/ জি-৯ (g-9) কলার চারা কোথায় পাওয়া যায় ?
উত্তর ঃ- এই কলার চারা বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যায় যারা টিসু কালচার ল্যাবের সাথে যুক্ত আছেন। প্রতিটি চারার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা দাম নিচ্ছে। এছাড়াও সরকরি ভাবে হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে এই টিসু কালচার কলার চারা প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন – ০৪/ জি-৯ (g-9) কলা চাষে কিকি রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে ?
উত্তর ঃ- জি নাইন কলা চাষ করলে ৩ টি সঠিক সময়ে প্রতি গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করা উচিত । চারা রোপনের দুই /তিন/চার মাস পর পর প্রতি গাছের গোড়ার ১ ফুট দুরুত্বে চারিদিকে -গোবর সার ১০- ১২ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট ৩ কেজি, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ,ফসফেট ১০০ গ্রাম এবং পটাশ ৫০ গ্রাম সকল সার একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়।
প্রশ্ন – ০৫/ জি-৯ (g-9) কলার কিভাবে রোগ ও পোকামাকড় দমন করা যায় ?
উত্তর ঃ- পোকামাকড়ের বেশিরভাগই পরিলক্ষিত হয় রুট স্টক/রাইজোম উইভিল,স্টেম বোরার, থ্রিপস,ব্যানানা বিটল, কলার এফিড এবং নেমাটোড। পোকামাকড়ের উপদ্রবের ধরন অনুসারে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন –ম্যালাথিয়ন/ডায়াজিনন ২মিঃলিঃ/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া পানামা উইল্ট,সিগাটোগা রোগ ,এর জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন – টিল্ট ১ মিঃলিঃ/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
প্রশ্ন – ০৬/ জি নাইন কলা বাগানের আর কিকি পরিচর্যা করতে হবে ?
উত্তর ঃ- # শীতের মাসগুলিতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে গেলে গাছের বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাতে সেচ দিতে হয়।কলা গাছকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করাতে হবে।
# গাছের শুকনো পাতা ব্যবহার করে গুচ্ছ বা কলার কাদি ঢেকে রাখতে হবে । স্বচ্ছ এবং ছিদ্রযুক্ত পলিথিন শীট 2% (ঠান্ডা মৌসুমে) – 4% (গ্রীষ্মের সময়)দিয়ে বায়ুচলাচলের জন্য কলার কাঁদিগুলিকে ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন – ০৭/ জি নাইন কলা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কখন করতে হবে ?
উত্তর ঃ- # বাজারে চাহিদার উপর নির্ভর করে কলা সামান্য বা সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে কলা কাটা হয়। দীর্ঘ দূরত্বের পরিবহনের জন্য ৭৫-৮০% পরিপক্কতায় কলা কাটা হয়।
# জি নাইন কলা রোপনের ৭ থেকে ৮ মাসে সংগ্রহ করা যায়। এভাবে ২৪-২৫ মাসের মধ্যে তিনটি ফসল তুলা সম্ভব।
# কলা সংগ্রহের পর মূলত ফলের আকার, রঙ এবং পরিপক্কতার উপর ভিত্তি করে গ্রেডিং করা হয়। গ্রেডিংয়ের সময় ছোট ফলগুলিকে বড়গুলি থেকে আলাদা করা হয়। অপরিপক্ব, অত্যাধিক পাকা, ক্ষতিগ্রস্থ ও রোগাক্রান্ত ফল গ্রেডিং প্রক্রিয়ায় ফেলে দেওয়া হয়।
# পরিপক্ক সবুজ কলা ইথিলিন মুক্ত বাতাসে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।