আমাদের দেশে পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় শাক। অন্যদিকে এ শাকের পুষ্টিগুণও অনেক। সাধারণত সবুজও লাল এই দুই ধরনের পুঁইশাক আমাদের দেশে পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে শাক জাতীয় তরকারির মধ্যে পুঁইশাক হলো সবার সেরা । ডাটা বাংলাদেশের অন্যতম গ্রীষ্মকালীন সবজি। ডাটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ, বি, সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম ও লৌহ বিদ্যমান। ডাটার কাণ্ডের চেয়ে পাতা বেশি পুষ্টিকর। খুব কম সবজিতে এত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।
প্রশ্ন ০১/ কোন মাটিতে পুঁইশাক ও ডাটা চাষ করা যায় ?
উত্তরঃ- পুঁইশাক ও ডাটা বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। পুঁইশাক ও ডাটাবাংলাদেশের অন্যতম গ্রীষ্মকালীন সবজি। পুঁইশাক ও ডাটা চাষের জন্য উর্বর ও গভীর দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত অথচ ‘জো’ থাকে এমন মাটিতে পুঁইশাক ও ডাটা সবচেয়ে ভাল জন্মে।
প্রশ্ন ০২/ পুঁইশাক ও ডাটা চাষষের জমি কিভাবে চাষ করতে হয় ?
উত্তরঃ- জমির আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। জমি গভীর করে কর্ষণ ও মিহি করে প্রস্তুত করতে হবে। জমিতে বড় ঢেলা রাখা যাবে না।
প্রশ্ন ০৩/ কি পদ্বতিতে মাটিতে পুঁইশাক ও ডাটা চাষ করা যায় ?
উত্তরঃ- আমাদের দেশি জাতসমূহ কাণ্ডপ্রধান, এগুলো ডালপালা খুব কম উৎপাদন করে। এসব জাত ৩০ সে.মি. দূরত্বে সারি লাগানো যেতে পারে। চারা গজানোর পর ক্রমান্বয়ে পাতলা করে দিতে হবে। যেন শেষ পর্যন্ত সারিতে পাশাপাশি দুটি গাছ ৮/১২ সে.মি. দূরত্বে থাকে। যেসব জাতের কাণ্ড অনেক মোটা ও দীর্ঘ হয় এবং দেরিতে ফুল উৎপাদন করে সেগুলো আরও পাতলা করা উচিত।
প্রশ্ন ০৪/ পুঁইশাক ও ডাটা চাষে কি পরিমান বীজের দরকার হয় ?
উত্তরঃ- পুঁইশাকের জন্য প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে। আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ আরো বেশী লাগবে। পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। ডাটা চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ০৫/ পুঁইশাক ও ডাটা চাষে কি পরিমান রাসায়নিক সার দরকার হয় ?
উত্তরঃ- পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম। ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি এবং ৩০-৪০ দিন পর ২য় কিস্তি । প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি সহ মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন ০৬/ পুঁইশাক ও ডাটা চাষে আর কি কি যত্ন দরকার হয় ?
উত্তরঃ- গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখা আবশ্যক। প্রয়োজনমতো জমিতে সেচ না দিলে কাণ্ড দ্রুত আঁশযুক্ত হয়ে ডাটার গুণগতমান ও ফলন কমে যায়। মাটির চটা ভেঙে ঝুরঝুরে করে দিলে গাছের বৃদ্ধিতে সুবিধা হয় এবং গোড়াপচা রোগও রোধ হয়। চারা গজানোর ৭ দিন পর হতে পর্যায়ক্রমে একাধিকবার গাছ পাতলাকরণের কাজ করতে হবে। জাত ভেদে ৫-১০ সে.মি. অন্তর অন্তর গাছ রেখে বাকি চারা তুলে শাক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে । যেহেতু পুঁইশাক ও ডাটা দ্রুত বর্ধনশীল ফসল তাই সঠিক সময়ে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন ০৭/ পুঁইশাক ও ডাটা চাষে ফলন কেমন হয় ?
উত্তরঃ পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি এবং হেক্টোর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টন ।
ডাটা একটি উচ্চ ফলনশীল সবজি। ডাটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের চাষ করলে প্রতি শতকে ১০০০-১২০০ কেজি এবং হেক্টরে প্রায় ২৫০ টন ফলন পাওয়া যায়।