ফাল্গুনের প্রকৃতি সত্যিই অতুলনীয়। গাছে গাছে নবপল্লবের সবুজ আভা নির্মল বাতাস সবই ফাল্গুনের অপরূপ শোভা। সুপ্রিয় কৃষক ভাই ও বোনেরা এখন আমরা ফাল্গুনের কৃষিতে করণীয় সম্পর্কে জানবোঃ
ধান :ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে তিন থেকে চার ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সম্মানিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোর ফাঁদ পেতে,পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর প্রকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকার সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে) ধানক্ষেত বালাই মুক্ত রাখতে হবে।
- এ সময় ধান খেতে উফরা,ব্লাস্ট,পাতা পোড়া ও টুংরো রোগ দেখা যায়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোন ক্রিমিনাশক যেমন কার্বোফুরান গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং ৫০% টেবুকোনাজল + ২৫% টাইফ্লক্সিস্ট্রবিন/ট্রাইসাইকাজল/স্ট্রবিন গ্রুপের অনুমোদিত ছত্ত্রাকনাশক মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে শেষে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
জমিতে পাতা পোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি /বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। পানি শুকিয়ে সাত থেকে দশ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে টুংরো রোগ দমনের জন্য এবং এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে।
ভুট্টা: খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করতে হলে এখনই বীজ বপন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে।ভুট্টার উন্নত জাত গুলো হল বাড়ি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪, বাড়ি হাইবিড ভুট্টা ১৫ এবং বাড়ি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ:পিয়াজ সাধারণত শীতকালে উৎপাদিত হয় তবে গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ চাষে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষক ফসলের উচ্চ মূল্য পেতে পারে। সেরকম একটি পেঁয়াজ হল বারি পিয়াজ ৫, সাধারনত চারা তৈরি করে বারি পেঁয়াজ ৫ চাষ করা হয়। বীজ বপনের সময় অত্যাধিক রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন/ চাটাই ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে
পাট :ফাল্গুন মাসে বপন উপযোগী পাটের ভালো জাত গুলো হলো:সিসি -৪৫,বিজেআরআই দেশি পাট শাক-১(বিজেসি-৩৯০),ফাল্গুনী তোষা (ও-৯৮৯৭),বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২)।ভালো ফলনের জন্য প্রতি একরে ৭৯ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি ১৮ কেজি জিপসাম এবং ৪.৫ কেজি জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে.
শাকসবজি: এ সপ্তাহে আপনারা পুই, ডাটা, মেথি, গিমাকলমি, মিষ্টি আলু, মুখি, কচু, ওল বেগুন, করলা ঢেঁড়স,মিষ্টি কুমড়া,চাল কুমড়া লাগাতে পারেন।
গাছপালা: আমের মুকুলে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ এ সময় দেখা দেয়। এ রোগ দমনে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে প্রপিকোনাজল অথবা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমেরআকার মোটর দানার মত হলে গাছে দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিপ্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার দশ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগে একবার এবং এর এক মাস পর আর একবার সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে গাছের পাতা মুকুল ও ডাল গলায় ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে
কাঁঠাল :কাঁঠালের ফল বা মুচি ঝরা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তায় জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে দশ দিন পর পর দুই তিনবার বোর্দো মিশ্রণ বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাক নাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কাঁঠাল ফুল বায়ু পরাগী। বাতাসের মাধ্যমে পরাগায়ন হয়ে থাকে।যত বেশি ফুল পরাগায়িত হবে কাঁঠালের কোষ ও তত বেশি হবে এবং আকারে বড় হবে । তাই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগায়ন নিশ্চিত করতে পারলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে।
আপনি জানেন কি পুরুষ মুচি পরাগায়নের পর কালো হয়ে ঝরে পড়বে এটাই নিয়ম। তবে স্ত্রী মুচি যদি কালো হয়ে পচে যায় তাহলে চিন্তার বিষয়।