বাদাম চাষ, সংগ্রহ ও সংরক্ষন

– চীনাবাদাম বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেলবীজ ফসল। তবে বাংলাদেশে চীনাবাদাম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। বর্তমানে বাংলাদেশে যে চীনাবাদাম উৎপাদিত হয় তা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মাত্র।

প্রশ্ন ০১/   কোন মাটিতে বাদাম চাষ করতে হয় ?

উত্তর ঃ-  চাষ উপযোগী জমি : বেলে, বেলে, দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে এ জাতের অধিক ফলন পাওয়া যায়। শুষ্ক জমি ছোলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

প্রশ্ন ০২/  কখন বাদাম চাষ করতে হয় ?

উত্তরঃ- বপনের সময় : বছরের যে কোনো সময় এর চাষ করা যায়, তবে রবি মৌসুমে মধ্য অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত (০১ কার্তিক হতে ১৫ ফাল্গুন) এবং খরিফ মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (আষাঢ়-আশ্বিন) পর্যন্ত বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ০৩/ বাদাম চাষ করতে  জমি তৈরি, বপন পদ্ধতি ও বীজের পরিমাণ ?

উত্তর ঃ-: জমি তৈরীঃ- ৩/৪ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়। শেষ চাষের সময় নির্ধারিত পরিমাণ সার দিয়ে চাষ ও মই দিতে হবে।

বীজ বপনঃ- বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি (৩০ সেমি.) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৬ ইঞ্চি (১৫ সেমি.) রাখতে হবে। বীজগুলো ১.০-১.৫ ইঞ্চি মাটির নিচে/গভীরে পুঁতে দিতে হবে।

বীজের পরিমাণ ঃ- বিঘা প্রতি ১৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ০৪/ বাদাম চাষ করতে কিকি রাসায়নিক সার দিতে হবে ?

উত্তর ঃ-  জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে সারের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে বিঘা প্রতি –  ইউরিয়া ৯-১০ কেজি, টিএসপি ১৪-১৫ কেজি, এমওপি ৩-৪ কেজি ও জিপসাম ৫০০ গ্রাম এবং বেলেমাটির ক্ষেত্রে বোরন ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি উর্বর হলে ইউরিয়া অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে । সব প্রকার সার শেষ চাষের পূর্বে জমিতে ছিটেয়ে প্রয়োগ করতে হবে।  

প্রশ্ন ০৫/ বাদাম চাষ করতে আর কিকি যত্ন করতে হয় ?

উত্তর ঃ –  আগাছা দমন : চারা গজানোর ২৫-৩০ দিন পর নিড়ানি দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে হালকাভাবে আগাছা উঠিয়া ফেলতে হবে।  

পানি সেচ : চীনাবাদাম চাষে স্বাভাবিক অবস্থায় সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে পানির অত্যধিক অভাব হলে একবার হালকা সেচ দেয়া যেতে পারে।

পোকামাকড় দমন : জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিলিকা আক্রমণ করে রোপিত বাদামের দানা খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারদিক লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়ে পিপিলিকা দমন করা য়ায়। উঁইপোকা চীনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। উঁইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়। ডায়াজিনন-১০ জি/বাসুডিন-১০ জি/ডারসবান-১০ জি যে কোন একটি বিঘা প্রতি ২ কেজি হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।  

রোগ দমন :   ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হলে ২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন-৫০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে জমিতে বিকালে স্প্রে করতে হবে। বপনের পূর্বে ৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০/প্রোভ্যাক্স/বেভিস্টিন ৫০ ডব্লিউপি দ্বারা প্রতি কেজি বীজ শোধন করলে রোগের আত্রমণ কম হবে। মরিচা রোগ দেখা দিলে ফলিকুলার নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ০৬/ বাদাম সংগ্রহ কখন করতে  হবে ? 

উত্তর ঃ- : ফসল সঠিক সময় তোলার জন্য ফসলের পরিপক্বতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা আবশ্যক। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বাদাম পরিপক্ব হবে তখনই চীনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলো হলুদ রঙ ধারণ করে নিচের পাতা ঝড়ে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙার পর খোসার ভেতরে সাদা কালচে রঙ ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। পরিপক্ব হওয়ার আগে বাদাম উঠালে তা ফল ও তেল কম হবে। আবার দেরিতে উঠালে বীজের সুপ্ততা না থাকার দরুন জমিতেই অংকুরিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ০৭/ বাদাম সংরক্ষণ  কিভাবে করতে  হবে? 

উত্তরঃ- জমি থেকে তোলার পর বাদামের গায়ে লেগে থাকা মাটি বা বালু পরিষ্কার করতে হবে। তারপর আঁটিগুলো উপুর করে অর্থাৎ বাদামগুলো উপরের দিকে রেখে গাছের মাথা শুকনো মাটিতে বসিয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এতে করে বাদামের গায়ে লেগে থাকা পানি ঝড়ে যাবে। পরে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা করে ৫-৬ দিন শুকাতে হবে। এ অবস্থায় বীজের আর্দ্রতা ৮-১০% হয়ে থাকে। এভাবে শুকানোর পর খোসাসহ বাদাম ঠাণ্ডা করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তায় মাচার ওপর সংরক্ষণ করতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top