এ সপ্তাহের কৃষি চৈত্র ১ম সপ্তাহ

আমরা ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শেষ মাসে চলে এসেছি। চৈত্র মাসে বসন্ত ঋতু নতুন করে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতিকে । চৈতালী হাওয়ায় জানান দেয় গ্রীষ্মের আগমন। চৈত্র বাংলা বছরের শেষ মাস। কিন্তু কৃষির শেষ বলে কিছু নেই। এ মাসে রবি ফসল ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম একসাথে করতে হয় বলে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।সুপ্রিয়  কৃষিজীবী ভাই ও বোনেরা আসুন জেনে নেই এ সপ্তাহের কৃষি আমাদের করণীয় কাযগুলো কিঃ

ধানঃ শীতের কারনে যারা বোরো ধানের চারা বিলম্বে রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার আগে আগাছানাশক দিয়ে জমির আগাছা পরিস্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোক ফাদ পেতে,পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে,ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে,উপকারী পোকা সংরক্ষন করে,ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে দেয়া) ধানক্ষেত বালাই মুক্ত রাখতে হবে।

  • জমিতে পাতা পোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ১.৫ কেজি/শতাংশ হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে।
  • টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে।
  • এ সময় ধান খেতে উফরা,ব্লাস্ট,পাতা পোড়া ও টুংরো রোগ দেখা যায়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোন ক্রিমিনাশক যেমন কার্বোফুরান গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং ৫০% টেবুকোনাজল + ২৫% টাইফ্লক্সিস্ট্রবিন/ট্রাইসাইকাজল/স্ট্রবিন গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

ভুট্টা: খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করতে হলে এখনই বীজ বপন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে।ভুট্টার উন্নত জাত গুলো হল বাড়ি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪, বাড়ি হাইবিড ভুট্টা ১৫ এবং বাড়ি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ:পিয়াজ সাধারণত শীতকালে উৎপাদিত হয় তবে গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ চাষে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষক ফসলের উচ্চ মূল্য পেতে পারে। সেরকম একটি পেঁয়াজ হল বারি পিয়াজ ৫, সাধারনত চারা তৈরি করে বারি পেঁয়াজ ৫ চাষ করা হয়। বীজ বপনের সময় অত্যাধিক রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন/ চাটাই ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ভুট্টা (খরিফ)

  • গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে হবে।
  • শতাংশ প্রতি ১০০-১২০ গ্রাম বীজ লাগবে।
  • প্রতি শতাংশ জমিতে ইউরিয়া ৩৬৫ গ্রাম, টিএসপি ২২২ গ্রাম, এমওপি ১২০ গ্রাম, জিপসাম ১৬০ গ্রাম এবং দস্তা সার ১৬ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে ।

পাট

  • চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপন করা যায়। পাটের ভালো জাতগুলো হলো ও-৯৮৯৭, ওএম-১, সিসি-৪৫, বিজেসি-৭৩৭০, সিভিএল-১, এইচসি-৯৫, এইচ এস-২৪। স্থানীয় বীজ ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করে জাতগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।
  • পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।
  • সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ১৭ থেকে ২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়।
  • পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭-১০ সেন্টিমিটার রাখা ভালো।
  • ভালো ফলনের জন্য শতাংশ প্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময় ৪০০ গ্রাম জিপসার ও ২০ গ্রাম দস্তা সার দিতে হবে।
  • চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করেত হবে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

অন্যান্য মাঠ ফসল

  • রবি ফসলের মধ্যে চিনা, কাউন, আলু, মিষ্টিআলু, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন যদি এখনো মাঠে থাকে তবে দেরি না করে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে।
  • কাটা/তোলা, বাছাই, মাড়াই, পরিষ্কার, শুকানো এবং সংরক্ষণসহ প্রতিটি ধাপে লাগসই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করলে খরচ কমে যাবে, লাভ বেশি হবে।
  • এ সময়ে বা সামান্য পরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পচনশীল ফসল সেজন্য তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।

শাকসবজি

  • গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এ মাসেই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করতে হবে।
  • সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে।
  • এসময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, শসা, ওলকচু, পটল, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক এসব চাষ করতে পারেন।

গাছপালা

  • এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-পাইরিপ্রক্সিফেন ৫%+ফেনপ্রপাথ্রিন ১৫% প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ এম এল/ ল্যমডাসাইহ্যলোথ্রিন ২.৫ ইসি গ্রুপের ঔষধ ১ এম এল/লি এবং প্রফেনোফস + সাইপারমেথ্রিন ১.২ এম এল/লি.পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • এ সময়ে আমে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যান্থাকনোজ রোগ দেখা দিতে পারে। রোগ দেখা দিলে প্রপিকোনাজল ০.৫ এম এল/লি. অথবা ডাইফেনোকনাজল ০.৫ এম এল /লি অথবা এজোক্সিস্ট্রবিন+ডাইফেনোকনাজল ১এল এল/লি. মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • কলা বাগানের পার্শ্ব চারা, মরা পাতা কেটে দিতে হবে।
  • পেঁপের চারা রোপণ করতে পারেন এ সপ্তাহে।
  • নার্সারিতে চারা উৎপাদনের জন্য বনজ গাছের বীজ বপন করতে পারেন।
  • যাদের বাঁশ ঝাড় আছে তারা বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় মাটি ও জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন।
  • কুল গাছের ফল সংগ্রহের পরপরই ডাল ছাঁটাই করতে হবে। 

লেখক: ইসমাত জাহান এমি, বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top